রাফাহতে ইজরায়েলের ভয়াবহ হামলার মধ্যেই নেতানিয়াহুর গ্রেফতারির আশঙ্কা! কোন পথে ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাত?
Israel's war on Gaza: ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (ICC)-র হাতে গ্রেফতার হতে পারেন নেতানিয়াহু। দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক আদালতে গাজায় গণহত্যার অভিযোগে কাঠগড়ায় ইজরায়েল।
বেশ কিছুদিন ধরেই হুমকি দিচ্ছিল ইজরায়েল। হামাসের হাতে বন্দিদের নিয়ে রফা না হলে রাফাহ উড়িয়ে দেবে ইজরায়েলি সেনা। বেশ কিছুদিন আগে থেকেই রাফাহ থেকে মানুষজনকে সরাতে শুরু করেছিল নেতানিয়াহু বাহিনী। হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে গোটা শহরটাই উড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এই ব্যাপারে প্রাথমিক ভাবে মত ছিল না আমেরিকার। রাফাহ উড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে যাতে বিরত থাকে ইজরায়েল, এ নিয়ে কম পরামর্শ ইজরায়েলকে দেয়নি জো বাইডেন। তবে পরে ইরানে বড়সড় হামলা না করার পরিবর্তে রাফাহ হামলার অনুমতি দিয়ে দেয় আমেরিকা। ফলে রাফাহ উড়িয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া অনেকদিন আগে থেকেই শুরু করে দিয়েছিল ইজরায়েল। রাফাহ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা। এরই মধ্যে আবার উঁকি দিয়েছে অন্য আশঙ্কা। আন্তর্জাতিক আদালতের হাতে গ্রেফতার হতে পারেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। সেই গ্রেফতারি পরোয়ানা হাতে আসাও নাকি এখন সময়ের অপেক্ষা। কোন পথে যেতে চলেছে এখন ইজরায়েল আর প্যালেস্টাইনের ভবিষ্যৎ। একদিকে আস্ত শহর রাফাহ, অন্যদিকে নেতানিয়াহুর কর্মফল? সব দিক থেকে মারাত্মক এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাত।
পূর্ব পরিকল্পনা মতোই রাফাহতে হামলা করা শুরু করে দিয়েছে ইজরায়েল। গত আটচল্লিশ ঘণ্টায় বারংবার রাফাহতে হামলা চালিয়েছে নেতানিয়াহু সরকার। ইতিমধ্যেই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে রাফায় ইজরায়েলি হামলায়। সোমবার শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ইজরায়েলের সাম্প্রতিকতম হামলায় তেরোজনের মৃত্যু হয়েছে অন্তত। জখম বহু। শেষ হামলায় ইজরায়েল নিশানা করে দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের বেশ কয়েকটি ঘরবাড়িকে। হামাসের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, ওই হামলায় মৃতের সংখ্যা অন্তত ১৫।
আরও পড়ুন: হামাস হামলার দায়ে সরলেন ইজরায়েলের গোয়েন্দাপ্রধান, হারের ইঙ্গিত নাকি…
গাজায় প্রায় সমস্ত জায়গাই হামলায় হামলায় ধ্বংস করে দিয়েছে ইজরায়েল। বাকি ছিল ওই রাফাহটুকুই। যার ফলে সেখানেই গাজার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পালিয়ে আসা মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। গাজায় পালিয়ে বাঁচার জায়গাটুকুও আর কোথাও নেই। মাস খানেক ধরেই অসংখ্য মানুষের শেষ আশা ছিল এই রাফাহ। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। মিশরের মধ্যস্থতায় হামাসের সঙ্গে বন্দিমুক্তি নিয়ে রফা হল না ইজরায়েলের। আর তার ফল ভুগতে হচ্ছে না রাফাহতে আশ্রয় নেওয়া হাজার হাজার মানুষকে। বহু আকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধবিরতির মুখ দেখতে পায়নি প্যালেস্টাইন। তবে ফের নতুন করে শহর ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষ, যাদের এই যুদ্ধের সঙ্গে, এই সংঘাতের সঙ্গে সিকেভাগ সম্পর্কও নেই।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে ঢুকে হামলা চালিয়েছিল প্যালেস্টিয়ানের সশস্ত্র বাহিনী হামাস। সেই হামলায় মৃত্যু হয় অন্তত ১২০০ জনের। হামাস বন্দি বানায় ২৫৩ জন ইজরায়েলিকে। তার পর থেকেই হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করে দিয়েছে ইজরায়েল। সে হামলা যত না হামাসের বিরুদ্ধে, তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল গাজার বিরুদ্ধে। সেই থেকে ৩৪ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে গাজায়। তার মধ্যে অর্ধেকই শিশু এবং নারী। সেই ধ্বংসলীলা থামেনি ছ'মাস পরেও। এবার গাজার রাফাহ শহর শেষ করতে উঠেপড়ে লেগেছে ইজরায়েল।
কাতার আর মিশরের মধ্যস্থতায় দীর্ঘদিন ধরেই হামাস আর ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আলোচনা চলছে। কিন্তু আলোচনা কোনওদিনই কোনও আশাজনক ফল আনতে পারেনি। কেউই কারওর চুক্তিতে সম্মত হয়নি, মধ্য়িখানে মরেছে শুধু নিরপরাধ মানুষ। রাফাহতে হামলা শুরু হওয়ার পর খালিল আল-হায়য়া নেতৃত্বাধীন হামাসের একটি প্রতিনিধি দল যুদ্ধবিরতি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে ইজরায়েলকে। সেখানেও আমেরিকার নেতৃত্বে মধ্যস্থতা করছে কাতার ও মিশর। তবে আদৌ সেখানেও কোনও রফাসূত্র বেরোবে কিনা, যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স কথা বসেছিল দুই হামাস আধিকারিকের সঙ্গে। তবে সাম্প্রতিক এই প্রস্তাবের ব্যাপের বিস্তারিত তারা কিছুই জানায়নি। তবে সূত্রের খবর, ৪০ জন ইজরায়েলি বন্দিকে ছাড়তে রাজি তারা। তবে তার পরিবর্তে ইজরায়েলি জেল থেকে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ছাড়তে হবে নেতানিয়াহপ সরকারকে। একই সঙ্গে গাজায় পাকাপাকি ভাবে যুদ্ধবিরতিও ঘোষণা করতে হবে ইজরায়েলকে। হামাসের এই দাবি কতটা মানতে চাইবে ইজরায়েল, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। ফলে গাজায় শান্তি যে বিশ বাঁও জলে, তা-ও ভালোই বুঝতে পারছে বিশ্ববাসী।
ইতিমধ্যেই প্যালেস্টিয়ানের প্রেসিডেন্ট মেহমুদ আব্বাস আমেরিকার কাছে আবেদন জানিয়েছে, যাতে ইজরায়েলের এই পরিকল্পিত হামলা কোনও ভাবে বন্ধ করা যায়। যদিও তেমন কোনও ভাবনাচিন্তা নেই নেতানিয়াহু সেনার। ইজরায়েলি সেনা প্রধান ইতিমধ্যেই রাফাহ ধ্বংসের নীল নকশায় সই করেছেন। ইজরায়েলের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী নেতানিয়াহুকে বুঝিয়েছে, হামাসের এই ধরনের চুক্তিতে রাজি হলে, নেতানিয়াহু সরকার পড়ে যেতে পারে। এদিকে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট বারবার করে আর্জি জানিয়েছেন আমেরিকাকে। তাঁর বিশ্বাস, ভয়াবহ এই হামলা যদি কেউ থামাতে পারে, তাহলে একমাত্র আমেরিকা। এরই মধ্যে আমেরিকা বলেছে, ইজরায়েল আমেরিকার সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়েছে এ বিষয়ে। হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়েছে, এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইজরায়েলি প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন ইতিমধ্যেই। তবে সত্যিই কিনারা বেরোবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে গোটা বিশ্বের রাজনীতিমহল।
আরও পড়ুন: গাজার পর লেবাননেও ‘মারণ’ ফসফরাস হামলা! যে ভয়ঙ্কর অভিযোগ ইজরায়েলের বিরুদ্ধে
এদিকে, ইজরায়েলি প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সামনে নয়া বিপদ। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (ICC)-র হাতে গ্রেফতার হতে পারেন নেতানিয়াহু। এমন একটা কানাঘুষো শোনা গিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক আদালতে গাজায় গণহত্যার অভিযোগে কাঠগড়ায় ইজরায়েল। দক্ষিণ আফ্রিকা-সহ একাধিক দেশ সওয়াল করেছে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে। সেই মামলাতেই এবার গ্রেফতার হতে পারেন নেতানিয়াহু। তাঁর বিরুদ্ধে জারি হতে পারে গ্রেফতারি পরোয়ানা। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমের মিত্রদেশগুলির থেকে সমর্থন জোগার করার চেষ্টা করছে ইজরায়েল। ইজরায়েলি সংবাদসংস্থা ওয়াল্লা জানিয়েছে, যথেষ্ট চাপে রয়েছেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। যার জন্য ইজরায়েলের তরফেও একাধিক বার ফোন গিয়েছে আমেরিকার কাছে। একমাত্র আমেরিকাই যে এই গ্রেফতারি আটকাতে পারে, তেমন বিশ্বাস ইজরায়েলেরও। ফলে এই মুহূর্তে অনেক কিছুই রয়েছে আমেরিকার হাতে। এই মুহূর্তে রাফাহ-ধ্বংস আটকাতে প্যালেস্টাইনও ভরসা রাখছে আমেরিকার উপরেও। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক আদালতে গ্রেফতারি এড়াতেও ইজরায়েলের ভরসা জো বাইডেনই। এবার কোন পথ বেছে নেবে আমেরিকা, তার উপর অনেকটাই নির্ভর করছে বিশ্বশান্তি।